**********************এস ডি জি**********************
পরিবর্তনশীল বিশ্বের সমতা ও বৈষম্যহীন উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ‘রূপান্তরিত আমাদের পৃথিবী : ২০৩০ সালের জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)’ শিরোনামে গৃহীত প্রস্তাবনা অনুমোদন হয়েছে। জাতিসংঘের উদ্যোগে ২৫ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর সংস্থার সদর দফতরে তিন দিনের বিশ্ব সম্মেলনে এই লক্ষ্যমাত্রাসমূহ আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরা এতে অংশ নিয়েছেন।
জাতিসংঘের উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো ১৫ বছরের এই বৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, প্রাথমিক শিক্ষার হার শতভাগে উন্নীত করা, লিঙ্গসমতা অর্জন, শিশুমৃত্যু কমানো, মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন, এইচআইভি/এইডস-ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ, টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং উন্নয়নে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব ইত্যাদি ৮টি লক্ষ্য নিয়ে ২০০১ সালে গৃহীত সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ইতিবাচক সফলতা অর্জন করেছে। প্রাথমিক শিক্ষা, শিশুমৃত্যু কমানো ও মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন ইত্যাদি কয়েকটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে কৃতিত্বের দাবিদার। এসডিজিতে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়নÑ এই ৩টি প্রধান বৈশিষ্ট্যকে সমন্বয় করা হয়েছে। এসডিজি হচ্ছে মানুষ ও পৃথিবীর সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার একটি বৃহৎ কর্মপরিকল্পনা, যা ব্যক্তি স্বাধীনতা নিশ্চিত করাসহ বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার পাশাপাশি সব নাগরিকের সম্ভাবনা, মর্যাদা ও সমতা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ জাতিসংঘ। সম্পদের টেকসই উৎপাদন ও ব্যবহার, প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা, জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন রোধে ত্বরিৎ উদ্যোগ এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে সব ধরনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করাই এসডিজির লক্ষ্য।
এসডিজির মাধ্যমে সব মানুষের সমৃদ্ধ ও নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক-সামাজিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সমন্বয় এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাসহ সমাজে সব ধরনের ভয়ভীতি ও বৈষম্য দূর করা হবে। এতে বলা হয়, পৃথিবীর কোথাও অশান্তি নিয়ে কোনো টেকসই উন্নয়ন হতে পারে না এবং টেকসই উন্নয়ন ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে সব নাগরিক, অংশীদার ও রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে।
জাতিসংঘ সারাবিশ্বের উন্নয়ন টেকসই করতে ১৭টি লক্ষ্য (এসডিজি) নির্ধারণ করেছে। প্রতিটির ক্ষেত্রে রয়েছে আবার একাধিক সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো (এসডিজি) হচ্ছে-
১. সব দেশ থেকে সব ধরনের দারিদ্র্য দূরীকরণ।
২. খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলা।
৩. স্বাস্থ্যকর জীবন নিশ্চিত করা এবং সব বয়সী মানুষের জন্য সমৃদ্ধ জীবনের প্রণোদনা প্রদান।
৪. সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে ন্যায্য ও মানসম্মত শিক্ষা এবং সবার জন্য আজীবন শেখার সুযোগ সৃষ্টি করা।
৫. লিঙ্গসমতা অর্জন এবং কন্যাশিশু ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা।
৬. সবার জন্য পানি ও স্যানিটেশন সহজলভ্য করা এবং এর টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
৭. সবার জন্য সহজলভ্য, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক শক্তিপ্রাপ্তি (বিদ্যুৎ/জ্বালানি) নিশ্চিত করা।
৮. সবার জন্য মানসম্মত কাজ ও উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার মাধ্যমে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহ প্রদান।
৯. সহজ অবকাঠামোর মাধ্যমে বৃহৎ, টেকসই শিল্পায়ন ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তিকে উৎসাহ প্রদান।
১০. বিভিন্ন দেশের মধ্যে এবং দেশের অভ্যন্তরে বৈষম্য কমিয়ে আনা।
১১. শহর ও মানুষের বসবাসকে একীভূত, নিরাপদ, প্রাণবন্ত এবং টেকসই করা।
১২. সম্পদের উৎপাদন এবং সেবন/ব্যবহারকে টেকসই করা।
১৩. জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন ও এর প্রভাব রোধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ।
১৪. সাগর, মহাসাগর ও সমুদ্রসম্পদের টেকসই উন্নয়ন এবং ব্যবহার নিশ্চিত করা।
১৫. প্রকৃতি ব্যবস্থাপনার টেকসই ব্যবহারকে উৎসাহ ও সুরক্ষা প্রদান, বনসম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও মরুময়তা প্রতিরোধ, বনজসম্পদের সুরক্ষা ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি বন্ধ করা।
১৬. টেকসই উন্নয়নে সমাজের সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা, সবার জন্য ন্যায়বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, সবক্ষেত্রে কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।
১৭. এসডিজির বাস্তবায়নে এবং টেকসই উন্নয়নে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব সৃষ্টি করা।
জাতিসংঘ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংস্থার কর্ম উদ্দেশ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলি এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা ও নির্ধারক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদান করে। এ ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন, নাগরিক সমাজের সংগঠনও এসডিজিতে তাদের স্ব স্ব বিষয়াবলি গুরুত্ববহ করতে মতামত প্রদান ও প্রচারণা চালায়।